রোজ রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, সকাল ৬:১৮


					
				
গৌরনদীর কসবা গ্রামে রয়েছে পাঁচশত বছরেরও পূর্বের জামে মসজিদ

গৌরনদীর কসবা গ্রামে রয়েছে পাঁচশত বছরেরও পূর্বের জামে মসজিদ

কসবা মসজিদ বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামে এর অবস্থান। বরিশালের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে এটিই আয়তনে সবচেয়ে বড়।

অবস্থানঃ কসবা, গৌরনদী, বরিশাল, বাংলাদেশ
প্রতিষ্ঠিতঃপঞ্চদশ বা ষোড়শ শতাব্দী
মালিকানাঃপ্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
স্থাপত্য তথ্যঃ দৈর্ঘ্য১৬.৯৬ মিটার
প্রস্থঃ ১৬.৯৬ মিটার
গম্বুজঃ ৯টি
মিনারঃ ৪টি
ভবনের উপকরণ পোড়ানো লাল ইট
অবকাঠামোঃ
নয় গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটির সাথে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের অনেকাংশেই মিল রয়েছে। পোড়ানো লাল ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বর্গাকার এ মসজিদটি। এর প্রতিটি বাহু ১৬.৯৬ মিটার দীর্ঘ। এবং দেয়ালগুলো প্রায় ২.১৮ মিটার চওড়া। মসজিদের আয়তন ১১.৬৮ মিটার ×১১.৬৮ মিটার

মসজিদের অভ্যন্তরভাগ চারটি পাথরের স্তম্ভ দ্বারা নয়টি চতুষ্কোণ ‘বে’-তে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি বে’র উপর একটি করে গম্বুজ রয়েছে। প্রতি গম্বুজের ভিত্তির নিচে পরস্পর ছেদকারী খিলানগুলোর চারটি ত্রিকোণাকার জায়গায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পেন্ডেন্টিভ অলঙ্করণ। ভবনটির কার্ণিশ প্রচলিত বাঙালি রীতিতে কিছুটা বাঁকানো। মসজিদের অলংকরণে ব্যবহৃত হয়: পোড়ামাটির বুটিদার নকশা, খাঁজ কাটা হীরক আকৃতির নকশা, প্যাঁচানো নকশা, শিকল নকশা এবং গোলাপ নকশা। মিহরাবের কুলুঙ্গিতে এবং দরজার খিলানে এখনো এ নকশাগুলোর নমুনা টিকে আছে।

মসজিদের চারকোণে রয়েছে ৪টি ছোট মিনার বা বুরুজ। এই বৃত্তাকার বুরুজগুলো ছাদ পর্যন্ত প্রলম্বিত। বুরুজগুলো নিচ থেকে উপরে ক্রমশঃ সরু হয়ে গেছে। এগুলোর ভিত্তি কিছুটা বাঁকানো এবং চূড়া একেবারে সমান।

ছাদের উপরে তিন সারিতে মোট নয়টি গম্বুজ রয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ চারটি পাথরের স্তম্ভের উপর ভর করে দন্ডায়মান। মনে করা হয় স্তম্ভগুলো আগ্নেয় শিলাজাত ব্যাসল্ট কিংবা ডলেরাইট পাথর দিয়ে নির্মিত।


মসজিদের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকের দেয়ালে রয়েছে তিনটি করে খিলান বা প্রবেশ পথ। এগুলোর মধ্যে মাঝের খিলানটি অন্য দুটির চেয়ে বড়। বর্তমানে পূর্ব দিকের তিনটি খিলান খোলা থাকলেও উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের মাঝের খিলানগুলোই শুধু খোলা রয়েছে। বাকি খিলানগুলো ইট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে; যা পূর্ব দেয়ালের খিলানগুলোর সাথে মিল রেখেই তৈরি করা হয়েছে। বহিঃপ্রাচীরের পশ্চিম দিকে একটি বাড়তি দেয়াল বা প্রজেকশন আছে।

হেনরী বেভারীজ তার বাকেরগঞ্জের ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন,
“এটি বিবিচিনি অপেক্ষা একটি অতীব সুন্দর ইমারত এবং এতে চারটি পাথরের স্তম্ভ রয়েছে; এর দুটি খুবই শীর্ণ এবং প্রচলিত প্রবাদ অনুযায়ী ভক্তদের হাতের সংস্পর্শে এগুলো এরকম হয়েছে।”

— হেনরী বেভারীজ[৫]
মসজিদের সামনে একটি পুকুর আছে যা এখন প্রায় শুকিয়ে গিয়েছে। সম্ভবত ওযু করার জন্য এটি খনন করা হয়েছিল।[৬]

এছাড়া, কসবা মসজিদের উত্তর দিকে দূত মল্লিক নামক এক মনীষীর মাজার রয়েছে। ৮৯০ বঙ্গাব্দের ১ জ্যৈষ্ঠ (১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দ) মাজারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। মাজার সংরক্ষণের জন্য সম্রাট জাহাঙ্গীর লাখেরাজ সম্পত্তি দান করেন। এ দানপত্রে সম্রাজ্ঞী নূর জাহান কর্তৃক খোদিত পাঞ্জা কসবার কাজী পরিবারের কাছে রক্ষিত আছে।[৫]

ইতিহাস সম্পাদনাঃ

এ মসজিদ নির্মাণের তারিখ সংযুক্ত কোনো শিলালিপি পাওয়া যায় নি। তবে জনশ্রুতি আছে, সম্রাট জাহাঙ্গীর এর আমলে এই জঙ্গলকে চাষাবাদের উপযোগী করার জন্য এক দল লোক জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করার সময় এ মসজিদটির সন্ধান পান। মসজিদের কোনো প্রতিষ্ঠাতা বা নির্মাণকারীর সন্ধান না পেয়ে তখন ওই এলাকার মুসলমানরা এর নাম রাখেন ‘আল্লাহর মসজিদ’।

আবার বলা হয়ে থাকে, সাবহি খান নামক এক ব্যক্তি ষোল শতকের প্রথমদিকে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে, নির্মাতার আর কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না।

কসবা মসজিদের ভূমি-নকশা, পরিমাপ, অভ্যন্তরীণ বিন্যাস, ছাদের উপর গম্বুজের অবস্থান, প্রবেশ দরজার অবস্থান ও অলংকরণ, চারকোণের বুরুজসমূহ প্রভৃতি দেখলে একে বাগেরহাটের খান জাহান নির্মিত নয়গম্বুজ মসজিদ এবং খুলনার মসজিদকুঁড় মসজিদের অনুকৃতি বলে মনে হবে। খান জাহানি স্থাপত্য রীতির সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠ মিল থাকায় মনে করা হয় যে, খান জাহান আলী কর্তৃক এ অঞ্চল মুসলিম অধিকারে আসার পর পনেরো শতকের মাঝামাঝি সময়ে কসবা মসজিদ নির্মিত হয়েছিল।

ড. আহমদ হাসান দানী তার মুসলিম আর্কিটেকচার ইন বেঙ্গল গ্রন্থে লিখেছেন-
“কসবা গৌরনদী থানার একটি প্রাচীন গ্রাম। এখানে পনের শতকের প্রথমভাগে রাস্তার পশ্চিম পাশে ছবি খান কর্তৃক নির্মিত বলে একটি মসজিদ আছে। কিন্তু মসজিদ সর্বদিক দিয়ে খুলনার মসজিদ কুঁড়ের মসজিদের মত। মসজিদের চারদিকে গোলাকৃতি মিনার আছে। ছাদে তিন সারিতে পাথরের স্তম্ভে ভর করে ৯টি গম্বুজ আছে। খান জাহান আলীর নির্মিত মসজিদের সাথে সাদৃশ্য আছে বলে এ মসজিদটি পনের শতকের মধ্যভাগে নির্মিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।”

— ড. আহমদ হাসান দানী

বর্তমান অবস্থাঃ

বর্তমানে মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।[১] এতে নিয়মিত নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা
“প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর”। archaeology.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১১।
“বরিশাল জেলা”। barisal.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১১।
“কসবা মসজিদ”। বাংলাপিডিয়া।
“মুসলিম স্থাপত্যকীর্তি: নয়গম্বুজবিশিষ্ট গৌরনদীর কসবা মসজিদ”। STUDY RESEARCH। ২০১৭-০৭-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১১।
“বরিশাল জেলার ঐতিহাসিক মসজিদ -মাহমুদ ইউসুফ”। The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১১।
“বরিশাল জেলা”। barisal.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
“কসবা মসজিদ”। www.obhijan.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১১।
“কসবা মসজিদ, গৌরনদী – Barisalpedia”। www.barisalpedia.net.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১১।

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন-০১৮২২৮১৫৭৪৮

Md Saiful Islam